ঠাকুরগাঁও এবারও হলো না দুই বাংলার মানুষের প্রতীক্ষিত মিলনমেলা
হাজারো মানুষের সমাগম, আবেগে ভরা অপেক্ষা—তবু সীমান্ত নির্দেশনায় বন্ধ থাকল স্বজন–মিলনের একদিনের সেই ঐতিহ্য
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০০:০১, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ঠাকুরগাঁও এবারও হলো না দুই বাংলার মানুষের প্রতীক্ষিত মিলনমেলা। ছবি: সমাজকাল
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার পাথর কালী মেলায় এবারো অনুষ্ঠিত হলো না দুই বাংলার মানুষের প্রতীক্ষিত মিলনমেলা। বরাবরের মতো এবারও হাজারো নারী–পুরুষ ভিড় জমালেও সীমান্তের কাঁটাতারের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের দেখা ও কথা বলার সুযোগ আর মিলল না।
বর্ষপুঞ্জিকা অনুযায়ী শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) হিন্দু সম্প্রদায়ের কালিপূজা উপলক্ষে ভাতুরিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর কুলিক নদীর পাড়ের শ্রী শ্রী জামর কালী জিউ (পাথর কালী) মন্দির চত্বর রীতিমতো উৎসবের আমেজে ভরে ওঠে। প্রতি বছর এই পূজাকে ঘিরে কুলিক নদীর দুই পারে—বাংলাদেশের ভাতুরিয়া, কোচল, চাপসার ও ভারতের নারগাঁও, মাকরহাটে—স্বজনদের মিলনমেলা বসে।
দুই বাংলার মানুষ বছরের এই একদিনের অপেক্ষায় থাকেন—সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে আত্মীয়দের দেখা, কথা, কুশল বিনিময় আর উপহার আদান–প্রদানের ক্ষণিক সুযোগের জন্য।
বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার, মিষ্টি, শাড়ি, পোশাকসহ নানা উপহার নিয়ে আসে দুই পাশের লোকজন।
এক সময় আবেগে অশ্রুসজল মুহূর্তে ভরে উঠত নদীর দুই পাড়।
কিন্তু ২০১৯ সালে করোনা মহামারির পর থেকে মিলনমেলা আর হয়নি। এ বছরও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কূটনৈতিক টানাপড়েনের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ফলে মিলনের সুযোগ বন্ধ থাকে।
মেলায় মানুষের ভিড় থাকলেও সীমান্তের ধারে কোনো জনসমাগম বা যোগাযোগে প্রশাসন কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে যারা বহু দূর থেকে শুধুমাত্র স্বজনের দেখা পাওয়ার আশায় এসেছিলেন, তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান।
একজন বয়স্ক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন—“এত বছর পর মেয়ের মুখটা একবার দেখব বলে এসেছিলাম… কিন্তু কাঁটাতারই সব থামিয়ে দিল।”
পাথর কালী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নগেন কুমার পাল বলেন,“পূজা উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় মিলনমেলা করা সম্ভব হয়নি। যারা দূরদূরান্ত থেকে এসেছিলেন, তারা ব্যর্থ মনোরথে ফিরে গেছেন—আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে।”
