রাহুল হত্যায় বিচারপতি ও সাবেক হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮:৫৪, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম। ফাইল ছবি
দিনাজপুরে ‘জুলাই যোদ্ধা’ রাহুল হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
অভিযোগপত্রে তালিকাভুক্ত আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, সহ সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আবু ইবনে রজব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক ও শেখপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ রায়হান ও শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম রমজান।
আরও আসামি করা হয়েছে শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, শশরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদ আলী রানা, ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিজিৎ বসাক, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রাকিবুল ইসলাম মিঠুন, যুবলীগ নেতা সিরাজুল সালেকিন রানা, যুবলীগ নেতা প্রলয় কান্তি রায় জন, যুবলীগ নেতা সুইট ও ছাত্রলীগ নেতা মিথুনকে।
দিনাজপুর সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোমবার (১ ডিসেম্বর) চার্জশিটটি জমা দেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার রায়।
চার্জশিটে অভিযোগ করা হয়েছে, গণআন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনাজপুর জেলা স্কুলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল রাস্তা দিয়ে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সময় আসামিদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্র-শস্ত্রসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।
এ সময় তারা দুইনলা বন্দুক, একনলা বন্দুক, বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য, পিস্তল, রিভলবার, হাঁসুয়া, সামুরাই, চায়নিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে ও আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণসহ অতর্কিতভাবে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চালাতে থাকেন। আসামিদের হামলায় জুলাই যোদ্ধা রবিউল ইসলাম রাহুল, সাব্বির ইসলাম, মুসলিম, রিয়াদ, পারভেজ, জনিসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হন। পরে রাহুলসহ অন্যদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভর্তিতে বাধা ও প্রাণনাশের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
গুরুতর আহত রবিউল ইসলাম রাহুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরদিন ১০ আগস্ট পারিবারিক কবরস্থানে রাহুলকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ১৯ আগস্ট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন দিনাজপুর উপ-শহর ৭নং ব্লকের বাসিন্দা মো. সাহার উদ্দিনের ছেলে বিএনপি নেতা মো. রুহান হোসেন। আদালত পিবিআইকে মামলাটির তদন্তভার দেন।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রদীপ কুমার রায় জানান, ওই ঘটনায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা কোতোয়ালি থানায় দায়ের রেকর্ড করা হয়। মামলা একই ঘটনায় দায়ের হওয়ায় একত্রে তদন্ত চালানো হয়। তদন্তে পাওয়া আলামত, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও সার্বিক বিষয়ে পাওয়া তথ্য পিবিআই পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য পাঠানো হয়। পরে সেটি দাখিলের অনুমতি দেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।
সূত্রটি জানায়, মামলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৫৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। নিহত রবিউল ইসলাম রাহুলের শরীর থেকে অস্ত্রপচারে বের করা ছররা গুলি, তার পরনের রক্তমাখা জামা কাপড়সহ অন্য আলামত আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
২১ বছরের রাহুল দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের বিদুরসাহি গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিনের ছেলে ও রানীগঞ্জ ইয়াহিয়া হোসেন স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
রাহুলের বাবা মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল, আমার ছেলে রাহুল লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করবে। কিন্তু অকালে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এক বাবাই জানেন, পিতার কাঁধে সন্তানের মরদেহ কতোটা বেদনাদায়ক’।
মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিলে অন্তবর্তী সরকার ও পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন মোসলেম উদ্দিন।
