অতিথি পাখির কলতানে মুখর চলনবিল

শীত আসার আগেই সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলাসহ চলনবিলজুড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দে প্রকৃতি ও পরিবেশ এখন মনোমুগ্ধকর। পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিতে কাজ করছে প্রশাসনও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নানা প্রজাতির হাজারও অতিথি পাখি আসায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে উত্তরাঞ্চলের মৎস্যভান্ডার চলনবিলের নদী-নালা, পুকুর-ডোবা, খাল-বিলসহ জলাশয়গুলো। জলবায়ুর বৈশ্বিক পরিবর্তনের পাশাপাশি নিরাপদ আবাস ও খাদ্যের প্রাচুর্য থাকায় পাখিরা আসছে তাড়াশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাজিপুর, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ, বেলকুচি, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তরেও। বিস্তীর্ণ চলনবিলের ধানের ক্ষেতে পাখির ঝাঁকের হাঁকডাক, কিচিরমিচির শব্দে গাছে গাছে ওড়া-উড়ির এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগে আসছেন পর্যটক-দর্শনার্থীরাও।

তাড়াশ উপজেলার বাসিন্দারা জানান, শীতের আগেই বস্তুল, উলিপুর, পঁওতা, সোলাপাড়া, দিঘিসগুনা, কুন্দইল, সগুনা, লালুয়া মাঝিরা, মালশিনসহ ২০ থেকে ২৫টি গ্রামে ভিড় জমেছে অতিথি পাখির। গাছে গাছে বাসা বেঁধেছে বালিহাঁস, নীলশির, শামুকখোল ত্রিশুল বক, রাতচরা, কোড়া, লালশির, বড় সরালি, ছোট সরালি। মাঠজুড়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ডাহুক, গাঙচিল, বক, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, চখাচখি, কাদাখোঁচা, মাছরাঙাসহ নাম না জানা পাখিও।

উলিপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক বাবুল আকতার বলেন, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও নিরাপদ পরিবেশে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার নানা প্রজাতির হাজার হাজার বৈচিত্র্যময় পাখির আনাগোনা বেড়েছে। নির্ভয়ে স্বচ্ছন্দে চড়ে বেড়াচ্ছে তারা। কয়েক বছর আগেও যে দৃশ্য দেখা যায়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর চলনবিলে স্বাভাবিক বন্যা হয়েছে। এ কারণে বিলের জলাশয়ে প্রচুর খাবার মিলছে। খাদ্যের প্রাচুর্য ও সহজলভ্যতায় বালিহাঁস, শামুকখোল এবং অন্য পরিযায়ী পাখি এই বিল অঞ্চলে আসতে উৎসাহ বোধ করছে। তাই এখানে পাখির আনাগোনা অন্য কয়েক বছরের তুলনায় বেড়েছে।

তার মতে, মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ায় চলনবিলে কমেছে অতিথি পাখি শিকারির সংখ্যা। ফলে দিন দিন বাড়ছে পাখির উপস্থিতিও।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির তাড়াশ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, রাতের আঁধারে অসাধু কিছু শিকারি এখনও অতিথি পাখি শিকার করছেন, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। চলনবিলের পাখি বাঁচাতে আইন প্রয়োগের পাশাপশি শিকারি ও ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক হারে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। তাহলে এই অঞ্চল থেকে পাখি শিকার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বিশাল এই চলনবিলে পাখি শিকারিদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের প্রতিরোধের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপে অতিথি পাখির আগমন বাড়ছে। পাখি শিকারিদের সংখ্যা এখন অনেক কম। তারপরও কারও অবস্থান জানা গেলে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুসারে অভিযান চলবে। প্রয়োজনে যৌথ ও সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েও তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।