আখাউড়ায় মর্জিনা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:৪৮, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
আখাউড়ায় মর্জিনা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩। ছবি: সমাজকাল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার কাঁচা বাজারের শ্রমিক মর্জিনা বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় তাকে। বুধবার দুপুরে এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সন্ধ্যায় কারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিচারিক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো– মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কারিয়া গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম (৪৩), হবিগঞ্জ জেলার রাণীগঞ্জের হোসেন ওরফে শফিক (৪০) ও একই জেলার গয়েরপুরের মো. রুমান মিয়া (২৪)। তিনজনই আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়ার লাল মিয়া হাজীর বাড়ির ভাড়াটিয়া। বুধবার রাতে পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে পিবিআই এসব জানায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্বীকার করে গ্রেপ্তারকৃতরা এবং স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয় বলে জানান পিবিআই।
আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রাম গ্রামের ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী নিহত মর্জিনা বেগম (৫৩) সড়ক বাজারে শ্রমিক ও পরিচ্ছন্নতার কাজ এবং সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি করতেন। দৃষ্টিহীন স্বামীকে নিয়ে নয়াবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি।
নিহতের মেয়ে রহিমা আক্তারের থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে মোবাইলে ফোনকল করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তার মাকে। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। ঐদিন বিকেল ৫টার দিকে সবজি আড়ত থেকে ফোন করে রহিমাকে জানানো হয়, আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয়ের পুরোনো টিনের চালা দেওয়া ভবনের পাশে এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে। রহিমা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। তিনি তার মায়ের গলায় চাপ দেওয়ার কালো দাগ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ময়লা দেখতে পান। লাশের পাশেই একজোড়া পুরুষের জুতা পড়েছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিবিআই পুলিশ সুপার শচীন চাকমা বুধবার রাতে হত্যা রহস্য উদঘাটনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তারা এ মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করেন। মামলাটি পিবিআই কর্তৃক ২৬ নভেম্বর অধিগ্রহণ করে এসআই মো. আল-আমিনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে বের হয়ে আসে মর্জিনা বেগমকে ওইদিন রাত ৩টা ৪ মিনিটের দিকে কাঁচা বাজারের দারোয়ান মো. শহিদুল ইসলাম নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে ফোনকল করে মালের গাড়ি আসার কথা বলে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে আসেন।
কাঁচা বাজারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, শহিদুল ফোন করার মাত্র ১৪ মিনিট পর রাত ৩টা ১৮ মিনিটে মর্জিনাকে কাঁচা বাজার হয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে আসার পর শহিদুল প্রথমে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপর হোসেন ওরফে শফিক ও মো. রুমান মিয়া ধর্ষণ করতে চাইলে মর্জিনা তীব্র বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শফিক ও রুমান মিয়া হাত–পা বেঁধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করার চেষ্টা চালায়।
মর্জিনার প্রতিরোধের মুখে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হত্যাকাণ্ডের সময় শফিক সজোরে মর্জিনার গলা, শহিদুল ইসলাম দুই হাতে চেপে ধরে এবং রুমান মিয়া দুই পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন। সম্মিলিতভাবে মর্জিনা বেগমকে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং গুপ্তচরের তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বুধবার দুপুরে পিবিআই আখাউড়া পৌরসভার সড়কবাজারস্থ কাঁচাবাজার সবজি দোকানের সামনে থেকে প্রথমে শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার পর শহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোন হারানোর নাটক সাজালেও পিবিআইয়ের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে ধরা পড়ে, তিনি একই হ্যান্ডসেট সিম পরিবর্তন করে ব্যবহার করছিলেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোসেন ওরফে শফিক (৪০) এবং মো. রুমান মিয়াকে (২৪) আখাউড়া মসজিদপাড়াস্থ লাল মিয়া হাজীর ভাড়া ঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মো. আল-আমিন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছা পোষণ করলে তাদের বিধি মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করা হয়।
