ভূমিকম্পে নিহত এক বছরের ফাতেমা: দাফনে থাকতে পারেননি বাবা-মা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে প্রাণ গেল মাত্র এক বছরের কন্যাশিশু ফাতেমার। শুক্রবার বিকেলে তার দাফন সম্পন্ন হলেও সেই শেষ বিদায়ে থাকতে পারেননি মা-বাবা কেউই। কারণ, শিশুটির মা কুলসুম বেগম শয্যা সংকটে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছেন স্বামী আব্দুল হক ও স্বজনেরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পের সময় ভুলতা গাউছিয়া সড়কের পাশের দেয়াল ধসে পড়ে ফাতেমা, তার মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগমের ওপর। ঘটনাস্থলেই মারা যায় এক বছরের শিশুটি। গুরুতর আহত হন তার মা ও প্রতিবেশী।

এরপর কুলসুমকে প্রথমে নেওয়া হয় রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও শয্যা নেই জানিয়ে কেবল জরুরি বিভাগে ব্যান্ডেজ করে বাড়ি নিয়ে যেতে বলা হয়।

কুলসুমের সঙ্গে থাকা তার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“দুপুর থেইকা তিনটা হাসপাতাল ঘুরতেছি। ঢাকা মেডিকেলে ওয়াশ আর ব্যান্ডেজ কইরা শুধু বলে—সিট নাই। যে রোগীর মাথায় আঘাত, কথা বলতে পারে না—তারে আমরা বাড়ি নিয়া যাই কেমনে? গরিব মানুষের চিকিৎসা কি এইভাবে বন্ধ হবে?”

পরিবারের দাবি, ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়েও একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। সেখানে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। শেষপর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে কুলসুমকে নেওয়া হচ্ছে আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে। তবে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় সময় পার হচ্ছে উদ্বেগে।

মোহাম্মদ হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ওই হাসপাতালে পৌঁছাইতে পারমু কিনা, আর পারলেও শালি বাঁচবেকি—শিওর না।”

ফাতেমার দাফন বিকেলে সম্পন্ন হলেও হাসপাতালের করিডরেই ছিলেন শিশুটির বাবা আব্দুল হক। স্ত্রীর জীবন-মৃত্যুর লড়াই এবং চিকিৎসা সংকটের মাঝেই তিনি সন্তানের শেষবারের মতো মুখ দেখার সুযোগ পাননি।

ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান জানান, ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা শিশুটির মা ও প্রতিবেশীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

এদিকে, রূপগঞ্জসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ভূমিকম্পে বেশ কয়েকটি ভবনে ফাটল, দেয়াল ধস ও আগুন লাগার ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।