উখিয়া ক্যাম্প থেকে অপহরণের তিন দিন পর রোহিঙ্গা শিশু
শহীদুল ইসলাম, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭:৩০, ১১ নভেম্বর ২০২৫
উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণের তিন দিন পর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া বাবার কোলে রোহিঙ্গা শিশু মোহাম্মদ ইছা। ছবি:সমাজকাল
কক্সবাজারের উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণের তিন দিন পর তিন বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু মোহাম্মদ ইছাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এলাকা থেকে সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের বি-ব্লকে নিজ বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় ইছাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর অজ্ঞাত একটি মোবাইল নম্বর থেকে শিশুটির পরিবারের কাছে ফোন আসে এবং মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়।
পরিবার প্রথমে স্থানীয় ক্যাম্প প্রশাসনের সহায়তায় খোঁজাখুঁজি চালায়, কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় ৯ নভেম্বর শিশুর পিতা মোহাম্মদ আমির আলী উখিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ঘটনার পরপরই উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করেন, যা ছিল চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। তাৎক্ষণিকভাবে উখিয়া থানা থেকে চন্দনাইশ থানায় যোগাযোগ করা হয়।
চন্দনাইশ থানার ওসি গোলাম সরওয়ারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল অভিযান শুরু করে।
পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিপণের টাকা নিতে অপহরণকারীকে নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারী পালিয়ে যায়। পরে দোহাজারী এলাকা থেকে শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে সোমবার বিকেলে ইছাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে শিশুটি মায়ের কোলে ফিরে আসে।
উখিয়া থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, `দুই থানার সমন্বিত পদক্ষেপের কারণেই শিশুটিকে কোনো ক্ষতি ছাড়াই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আমরা ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলাম।‘
ইছার বাবা মোহাম্মদ আমির আলী বলেন, `আমি ভেবেছিলাম আর ছেলেকে পাব না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় আমার ছেলে ফিরে এসেছে—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ।‘
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় শিশু অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। তারা মনে করেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি এভাবে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়, তবে অপহরণকারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে এবং ভবিষ্যতে প্রাণহানির ঝুঁকিও কমে যাবে।
