ছেঁউড়িয়ায় আজ থেকে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব

উপমহাদেশের প্রখ্যাত মরমি সাধক, কবি ও মানবতাবাদী দার্শনিক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস আজ। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ঐতিহাসিক ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়িতে আজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব।

এবারই প্রথমবারের মতো এই স্মরণোৎসব জাতীয় পর্যায়ে আয়োজন করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে উৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়ি এখন বাউল, সাধক ও লালনভক্তদের পদচারণায় মুখর।

আজ বিকালে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে স্মরণোৎসবের উদ্বোধন হবে, যা চলবে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। উৎসব উপলক্ষে কালী নদীর তীরে বসেছে বিশাল লালন মেলা, যেখানে দেশ-বিদেশের ভক্তরা তাবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিশাল মাঠজুড়ে ভক্ত-অনুসারীরা একতারা, দোতারা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রে লালনের অমর বাণী গেয়ে চলেছেন। মাঠের দক্ষিণে তৈরি করা হয়েছে মূল মঞ্চ এবং উত্তরে বসেছে পণ্যসামগ্রীর দোকান। সমাধির পাশের শেডের নিচেও চলছে লালনের গান, দর্শনচর্চা ও ভাব বিনিময়।

স্থানীয় লালন অনুসারী ফারুক সাধু বলেন, ‘এখানে আসি মূলত সাঁইজির মর্মবাণী চর্চা ও ভক্তদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের জন্য। এটি আত্মার শুদ্ধি ও মুক্তির এক অনন্য আয়োজন।’

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর (১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক) ফকির লালন সাঁই তিরোধান করেন। তাঁর পর থেকেই এই দিনে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন স্মরণোৎসব আয়োজন করে আসছে।

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’—এই অমর বাণীকে ধারণ করে এবারের জাতীয় স্মরণোৎসবের মূল বার্তা রাখা হয়েছে ‘আত্মিক মুক্তি ও মানবতার সাধনা’।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানান, প্রতিদিন রাতে মূলমঞ্চে আলোচনা সভা ও দেশবরেণ্য লালন শিল্পীদের আধ্যাত্মিক সংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আখড়াবাড়ী এলাকায় সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ারসহ কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।

তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন শেষ হবে রবিবার মধ্যরাতে লালন সাধুসঙ্গ ও সমাপনী আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।