মোটরসাইকেল থেকে নেমে ‘ইমন-মামুন বাহিনী’র বিরোধে খুন তারিক সাইফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:২৮, ১০ নভেম্বর ২০২৫
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে গুলি করার সে মুহূর্ত (ইনসেটে নিহত মামুন)। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে একসময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে (৫৫)।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ঘটে এ ঘটনা। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, দুই মোটরসাইকেল আরোহী মাস্ক ও ক্যাপ পরে মোটরসাইকেল থেকে নেমেই মামুনের ওপর একাধিক গুলি ছোড়ে।
সিসিটিভি ফুটেজে হত্যার মুহূর্ত ধরা পড়েছে
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ১০টা ৫২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে মামুন একা হেঁটে যাচ্ছিলেন। কিছু সময় পর দৌড়ে ফিরে আসতে দেখা যায় তাকে। পেছন দিক থেকে দুই হামলাকারী গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসে এবং মামুনকে লক্ষ্য করে একাধিক রাউন্ড গুলি চালায়। পরে তারা অস্ত্র কোমরে গুঁজে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে; আশপাশের মানুষজন ছুটোছুটি শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তরা প্রথমে হাসপাতালের ভবনের দিকে গুলি ছোড়ে, যা তিনতলার কাচে লাগে। এরপর খুব কাছ থেকে মামুনের বুকে ও হাতে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন।
‘ইমন-মামুন’ বাহিনীর বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত তারিক সাইফ মামুন একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন। দু’জন মিলে ‘ইমন-মামুন’ নামে বাহিনী গড়ে তোলেন, যারা একসময় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দুইজনের মধ্যে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়, যা থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।
মামুন ছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি। দীর্ঘ ২০ বছরের জেল খাটার পর তিনি ২০২৩ সালে জামিনে মুক্তি পান।
এর আগেও হামলার শিকার হয়েছিলেন মামুন
জামিনের তিন মাস পর, ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে মামুনের ওপর হামলা হয়, যেখানে মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, হামলাটি কারাগারে থাকা ইমনের সহযোগীরাই পরিচালনা করেছিল।
এই ধারাবাহিকতারই সর্বশেষ অধ্যায় হতে পারে সোমবারের হত্যাকাণ্ড, বলছে তদন্তকারী সংস্থা।
পুলিশের বক্তব্য ও তদন্তের অগ্রগতি
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী জানান, নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ অনুসন্ধান এবং জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ বলেন, “গুলির শব্দে সবাই ছুটে আসে, তখন দেখি মামুন রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ঢামেকে পাঠানো হয়।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
