বইয়ের জ্ঞান খেলাপিদের কাছে হার মানল: উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:৪৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে বিআইডিসের বার্ষিক সম্মেলনে নিজের লেখা দুটি বই হাতে দাঁড়িয়ে এই অভিজ্ঞতার কথা শোনান উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
সরকারে যোগ দিয়েই খেলাপি ঋণ দমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মডেল প্রয়োগের ভাবনা ছিল পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের। তার নিজের লেখা বই থেকেই নেওয়া সেই ধারণা অনুযায়ী খেলাপি উদ্যোক্তাদের ব্যবসার শেয়ার সরকারের হাতে নেওয়ার প্রস্তাবও ছিল তার মাথায়। তবে বাস্তবে এসে দেখা গেল— বাংলাদেশের খেলাপিদের কৌশলের কাছে সেই ‘বইয়ের জ্ঞান’ কার্যকর হয়নি।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে বিআইডিসের বার্ষিক সম্মেলনে নিজের লেখা দুটি বই হাতে দাঁড়িয়ে এই অভিজ্ঞতার কথা শোনান এই উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “আমাদের প্রথম ধারণা ছিল—বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশে নিজেদের ঋণ খেলাপি বলে পরিচয় দেওয়া মালিকদের থেকে প্রতিষ্ঠানটির একটি শেয়ার সরকার নিয়ে নেবে। নতুন ঋণ দেওয়া হবে না, বরং শেয়ার থেকে সরকারের আয় তৈরি হবে। তবে সরকার পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করবে না। বিশ্বের বহু দেশের উদাহরণ অনুসরণ করে এই পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।”
উপদেষ্টা বলেন, “দেখা গেল, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ইতোমধ্যে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। নিজের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এমনকি দেশে বিক্রি করার মতো সম্পদও তাদের নেই। সব সম্পত্তি তারা বিদেশে কিনেছেন। ফলে ফর্মুলাটা কাজে লাগল না। আমি খুব আশাহত।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে উপদেষ্টা বলেন, খেলাপি ঋণ এখন দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়— গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ৩৫.৭৩ শতাংশ।
উপদেষ্টা জানান, তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে আরও ৩৬ হাজার কোটি টাকা। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, অবৈধ আয় এবং বিদেশে পুঁজি পাচারকে খেলাপি বৃদ্ধির মূল কারণ।
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “অবৈধ আয় বা রেন্ট সিকিং কমাতে গেলে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সবচেয়ে বড় বিষয়। শুধু আইন তৈরি করে, নিয়ম করে—খেলাপি বা অবৈধ আয়ের উৎস বন্ধ করা যায় না। একটি পথ বন্ধ করলে অন্য পথ খুঁজে নেওয়া হয়—আমরা অতীতে সেটাই দেখেছি।”
অবৈধ আয়ের প্রভাব শিক্ষাক্ষেত্রেও পড়ছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আগের দিনের প্রাইমারি শিক্ষকরা ছাত্রদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন। কিন্তু এখন প্রাথমিক শিক্ষকরা ছাত্রদের জিম্মি রেখে পরীক্ষা বন্ধ করে ধর্মঘটে গেছেন। জবাবদিহিতার বাইরে যে দায়িত্ববোধ—সেটাই আজ হারিয়ে যাচ্ছে।”
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই অবস্থায় জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বড় ধরনের সংস্কার সম্ভব নয়।
